সচরাচর জিজ্ঞাসা
ভূমি সেবা সম্পর্কিত আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এখানে খুঁজুন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
এগুলো বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত ভূমি জরিপ। সি.এস (Cadastral Survey) ব্রিটিশ আমলে, এস.এ (State Acquisition) পাকিস্তান আমলে, আর.এস (Revisional Survey) বাংলাদেশ আমলে পরিচালিত হয়। বি.এস (Bangladesh Survey) হলো সবচেয়ে আধুনিক জরিপ।
দাগ নম্বর হলো একটি মৌজার অন্তর্গত জমির একটি নির্দিষ্ট অংশের পরিচিতি নম্বর। অন্যদিকে, খতিয়ান হলো একজন বা একাধিক মালিকের অধীনে থাকা সকল দাগের বিবরণসহ একটি হিসাব নম্বর।
দলিল হলো জমি হস্তান্তরের আইনি প্রমাণপত্র, যা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়। অন্যদিকে, খতিয়ান হলো জমির মালিকানার বিবরণ ও দখলিস্বত্বের প্রমাণ, যা ভূমি অফিস দ্বারা সংরক্ষিত হয়। দলিলের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তনের পর খতিয়ান সংশোধন করা হয়।
জমি কেনার আগে বিক্রেতার মালিকানার প্রমাণ হিসেবে খতিয়ান ও দলিলের সঠিকতা, জমির দাগ নম্বর, মৌজা ম্যাপ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ (দাখিলা) এবং জমিটি কোনোভাবে দায়বদ্ধ কিনা (যেমন বন্ধক) তা যাচাই করা আবশ্যক।
জমির মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে জমি বন্টনের জন্য ওয়ারিশ সনদ প্রয়োজন। এই সনদের ভিত্তিতেই উত্তরাধিকারীদের নামে জমির নামজারি করা হয়।
দলিলে দাগ নম্বর বা অন্য কোনো তথ্য ভুল হলে একটি “ভুল সংশোধন দলিল” (Deed of Rectification) রেজিস্ট্রির মাধ্যমে তা সংশোধন করা যায়। এর জন্য উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন হয়।
খতিয়ান ও পর্চা
পর্চা হলো খতিয়ানের অনুলিপি বা কপি। জরিপ চলাকালীন সময়ে জমির মালিককে যে খসড়া খতিয়ান দেওয়া হয় তাকে পর্চা বলে। চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর এটি খতিয়ান হিসেবে গণ্য হয়।
ই-পর্চা হলো খতিয়ানের অনলাইন বা ডিজিটাল সংস্করণ। এর প্রধান সুবিধা হলো, ঘরে বসেই যেকোনো সময় খতিয়ানের জন্য আবেদন করা যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে এর অনলাইন কপি সংগ্রহ করা যায়, যা সময় ও শ্রম বাঁচায়।
land.gov.bd অথবা dlrms.land.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ও মৌজা নির্বাচন করে খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করুন। এরপর নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে অনলাইন কপি বা সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করা যায়।
অনলাইন কপি তাৎক্ষণিকভাবে ডাউনলোড করা যায় এবং এটি সাধারণ তথ্য যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। সার্টিফাইড কপি ভূমি অফিস কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও সিলমোহরকৃত একটি অনুলিপি, যা আইনগতভাবে অধিক গ্রহণযোগ্য এবং দালিলিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধনের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করা যায়। গুরুতর ভুলের জন্য (যেমন মালিকানা সংক্রান্ত) উপযুক্ত আদালতে মামলা করে রায় প্রাপ্তির পর খতিয়ান সংশোধন করা হয়।
সকল মৌজার খতিয়ান এখনও অনলাইনে আপলোড সম্পন্ন হয়নি। আপনার খতিয়ান অনলাইনে না পাওয়া গেলে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে হবে।
নামজারি (Mutation)
জমির মালিকানা পরিবর্তনের পর সরকারি রেকর্ডে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নামজারি অপরিহার্য। নামজারি না করলে নতুন মালিক ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে পারেন না এবং তার মালিকানা সরকারিভাবে রেকর্ডভুক্ত হয় না।
হ্যাঁ, বাধ্যতামূলক। সাফ কবলা দলিলের মাধ্যমে মালিকানা অর্জনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নামজারি করে খতিয়ান সংশোধন করা উচিত। এটি না করলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
সাধারণত দলিলের কপি, পূর্বের মালিকের খতিয়ানের কপি, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ, ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), এবং আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি প্রয়োজন হয়।
mutation.land.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র আপলোড করে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি ট্র্যাকিং নম্বর পাওয়া যায়, যা দিয়ে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, নামজারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত ২৮ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে আবেদনের তথ্যে কোনো সমস্যা না থাকলে এর আগেও সম্পন্ন হতে পারে।
নামজারির মোট সরকারি ফি ১১৫০ টাকা, যা সম্পূর্ণ অনলাইনে (মোবাইল ব্যাংকিং বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং) পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে আবেদন ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন ফি ১০০০ টাকা এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি ৮০ টাকা।
আবেদন বাতিলের কারণ জেনে নিন। যদি কাগজপত্রের ঘাটতি বা তথ্যে ভুল থাকে, তবে তা সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করা যাবে। গুরুতর কোনো সমস্যা হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ভূমি উন্নয়ন কর
জমির মালিকানার জন্য সরকারকে প্রতি বছর যে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর বা খাজনা প্রদান করতে হয়, তাকেই ভূমি উন্নয়ন কর বলে।
ldtax.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করে আপনার খতিয়ানের তথ্য যুক্ত করুন। এরপর বকেয়া করের পরিমাণ দেখে মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্যান্য অনলাইন মাধ্যমে কর পরিশোধ করতে পারবেন এবং সাথে সাথে দাখিলা সংগ্রহ করতে পারবেন।
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পর সরকার প্রদত্ত রশিদকে দাখিলা বলে। এটি জমি আপনার দখলে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এবং জমি বিক্রি বা নামজারির সময় এটি প্রদর্শন করা আবশ্যক।
জমির ব্যবহার (যেমন কৃষি, আবাসিক, বাণিজ্যিক) এবং পরিমাণ অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন করের হার নির্ধারিত হয়। ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির কোনো কর দিতে হয় না।
হ্যাঁ, আপনি অনলাইনে বকেয়া সহ একাধিক বছরের ভূমি উন্নয়ন কর একসাথে পরিশোধ করতে পারবেন। পোর্টালে আপনার মোট বকেয়ার পরিমাণ দেখানো হবে।
অন্যান্য অনলাইন সেবা
ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো সেবা বা অভিযোগের জন্য হটলাইন নম্বর ১৬১২২-এ কল করা যায়। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য রয়েছে +880 9612-316122 নম্বর।
নামজারি বা খতিয়ানের আবেদন করার পর প্রাপ্ত ট্র্যাকিং নম্বর দিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের ‘আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা’ মেন্যু থেকে আপনার আবেদনের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে পারবেন।
এখন অনলাইনে land.gov.bd পোর্টালের মাধ্যমে মৌজা ম্যাপের জন্য আবেদন করা যায়। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সার্টিফাইড কপি ডাকযোগে পাওয়ার জন্য আবেদন করা যায়।
জমির সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রথমে স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা যেতে পারে। সমাধান না হলে, সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করা যায় অথবা দেওয়ানী আদালতে মামলা করা যেতে পারে।
