নামজারি খতিয়ান, খতিয়ান অনুসন্ধান, আর এস খতিয়ান, খতিয়ান ডাউনলোড

eporcha gov bd খতিয়ান অনুসন্ধান

জমির মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ রাখার জন্য খতিয়ান একটি পরিহার্য দলিল তাই এটি সম্পর্কে সর্বদা অবগত থাকা জরুরী। আপনি যদি একটি খতিয়ান সম্পর্কে অবগত থাকতে চান তাহলে এটাকে অনলাইনে কিছু দিন পর পর যাচাই করা জরুরী, আর আপনি এখন অনলাইনে যেকোণ খতিয়ান অনুসন্ধান বা যাচাই করতে পারেন, এছাড়াও আপনি যদি অন্য যেকারো জমির যেকোণ ধরণের খতিয়ান অনুসন্ধান করতে তাহলে আপনার মোবাইল দিয়ে তা খুব সহজেই করতে পারবেন। চলোন দেখে নেই খতিয়ান সম্পর্কে বিস্তারিত এবং কিভাবে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে হয়।

খতিয়ান কী এবং কেন খতিয়ান অনুসন্ধান করা জরুরি?

খতিয়ান হলো একটি জমির মালিকানার বিস্তারিত বিবরণ যেখানে মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, জমির পরিমাণ, দাগ নম্বর, মৌজা, জে.এল. নম্বর সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো লিপিবদ্ধ থাকে। এটি জমির মালিকানার প্রাথমিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করে।

বিভিন্ন কারণে খতিয়ান অনুসন্ধান করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পরেঃ

  • মালিকানা যাচাই: জমি কেনার আগে বিক্রেতার দেওয়া তথ্য সঠিক কিনা এবং তিনিই প্রকৃত মালিক কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য খতিয়ান অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। এটি আপনাকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করবে।
  • আইনি ভিত্তি: জমি সংক্রান্ত যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য খতিয়ান দরকার হয়।
  • আর্থিক লেনদেন বা লোন: ব্যাংক থেকে হোম লোন বা অন্য কোনো লোন নিতে, অথবা জমি বন্ধক ও বিক্রি করার জন্যও এটি প্রয়োজন।
  • উত্তরাধিকার বন্টন: উত্তরাধিকার সূত্রে যদি সম্পত্তি বন্টন করা হয় তাহলে খতিয়ান প্রয়োজন কারণ সঠিক বণ্টনের জন্য খতিয়ান জরুরী।
  • বিভিন্ন প্রকার খতিয়ান পরিচিতি

    ভূমি জরিপের সময়কাল এবং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে খতিয়ান বিভিন্ন নামে পরিচিত। এদের প্রত্যেকটির নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে:

    • সিএস (CS – Cadastral Survey): এটি ব্রিটিশ শাসনামলে (১৮৮৮-১৯৪০) পরিচালিত বাংলাদেশের প্রথম বিস্তারিত ভূমি জরিপ। এটি সবচেয়ে পুরনো রেকর্ড এবং অনেক ক্ষেত্রে জমির আদি মালিকানা নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
    • এসএ (SA – State Acquisition Survey): ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর পাকিস্তান সরকার কর্তৃক এই জরিপ পরিচালিত হয়। এটি মূলত জমিদারদের কাছ থেকে সরকারের কাছে জমির মালিকানা হস্তান্তরের রেকর্ড। তবে তাড়াহুড়ো করে করায় এতে অনেক ভুলত্রুটি রয়েছে।
    • আরএস (RS – Revisional Survey): এসএ জরিপের ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য পরবর্তীতে যে পুনঃজরিপ করা হয়, তাই আরএস জরিপ। এটি তুলনামূলকভাবে নির্ভুল এবং বর্তমানে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খতিয়ান।
    • বিএস (BS – Bangladesh Survey) / সিটি জরিপ: বাংলাদেশ আমলে (মূলত ১৯৮৪ সালের পর থেকে) পরিচালিত সবচেয়ে আধুনিক জরিপ। শহর এলাকায় এটি ‘সিটি জরিপ’ নামে পরিচিত। যে সকল এলাকায় বিএস/সিটি জরিপ চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে এটিই সর্বশেষ এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রেকর্ড হিসেবে গণ্য হয়।

    eporcha gov bd খতিয়ান অনুসন্ধান অনলাইনে

    বর্তমানে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য সরকারের ল্যান্ড পোর্টাল (dlrms land gov bd)ব্যাবহার করা হয়। কিছুদিন আগেও eporcha gov bd ওয়েবসাইট থেকে যেকোণ ধরণের খতিয়ান অনুসন্ধান করা যেত তবে বর্তমানে এটি বন্ধ রয়েছে এবং খতিয়ান অনুসন্ধান এখন dlrms land gov bd ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করা যাচ্ছে।

    1. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে ব্রাউজারের মাধ্যমে ল্যান্ড ওয়েবসাইট প্রবেশ করুন (dlrms land gov bd)।
    2. মেন্যু: হোমপেজে থাকা বিভিন্ন মেন্যুর মধ্যে থেকে ‘সার্ভে খতিয়ান’ অথবা যদি নামজারি খতিয়ান চান তবে ‘নামজারি খতিয়ান’ অপশনটি বেছে নিন।
    3. ঠিকানা (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ):
      • প্রথমে ড্রপডাউন থেকে আপনার জমির সঠিক বিভাগ নির্বাচন করুন।
      • এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন করুন।
      • আপনার জমির উপজেলা বা থানা নির্বাচন করুন।
      • আপনি কোন ধরনের খতিয়ান খুঁজছেন (যেমন: আরএস, বিএস, এসএ) তা খতিয়ানের ধরন থেকে নির্বাচন করুন।
      • সবশেষে, সবচেয়ে গুরুত্ব হলো সঠিক মৌজা নির্বাচন করা। মৌজার নামের পাশাপাশি জে.এল. নম্বর দেওয়া থাকে, যা দেখে নিশ্চিত হতে পারেন। একই নামে একাধিক মৌজা থাকতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
    4. অনুসন্ধানের পদ্ধতি: আপনি তিনটি উপায়ে আপনার জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারবেন:
      • খতিয়ান নম্বর: খতিয়ান নম্বর দিয়ে খতিয়ান অনুসন্ধান করা সহজ, এবং তাড়াতাড়ি খতিয়ান খুজে পাওয়া যায়।
      • দাগ নম্বর: আপনার জমির এক বা একাধিক দাগ নম্বর জানা থাকলে, সেটি দিয়েও অনুসন্ধান করতে পারবেন।
      • মালিকের নামঃজমির মালিকের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করা যায়।
      • ভূমি মন্ত্রণালয় খতিয়ান অনুসন্ধান: মনে রাখবেন, dlrms.land.gov.bd পোর্টালটি ভূমি মন্ত্রণালয়েরই একটি অংশ। তাই খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য এই পোর্টালটিই একমাত্র ব্যাবহার যোগ্য।

        খতিয়ান অনুসন্ধানে সাধারণ সমস্যা ও তার বিস্তারিত সমাধান

        ১. অনলাইন খতিয়ান খুঁজে না পাওয়া গেলে করণীয়:

        এর প্রধান কারণ হতে পারে ওই মৌজার সকল খতিয়ান এখনও সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড না হওয়া। বিশেষ করে পুরনো সিএস বা এসএ খতিয়ানের ক্ষেত্রে এমনটি বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হলো:

        • সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুমে যোগাযোগ করা।
        • উপজেলা ভূমি অফিসে খোঁজ নেওয়া।
        • নির্ধারিত ফর্মে ম্যানুয়ালি সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করা।

        ২. তথ্যে ভুল থাকলে সংশোধন:

        যদি জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করে দেখেন তথ্যে ভুল আছে (যেমন: নামের বানান, পিতার নামে ভুল, জমির পরিমাণে গরমিল, দাগ নম্বরে ভুল), তবে এটি একটি গুরুতর বিষয়। এই ভুল সংশোধনের জন্য আপনাকে ‘রেকর্ড সংশোধন মামলা’ করতে হবে। এর জন্য আপনার এলাকার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা AC Land অফিসে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র (যেমন: মূল দলিল, ওয়ারিশ সনদ, পূর্ববর্তী সঠিক খতিয়ান ইত্যাদি) সহ আবেদন জমা দিতে হবে। প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

        ৩. পেমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যা:

        টাকা কেটে নেওয়ার পরও যদি কপি ডাউনলোড না হয় বা আবেদন সফল না দেখায়, তবে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। অনেক সময় সার্ভারের চাপের কারণে আপডেট হতে সময় লাগে। এরপরও সমাধান না হলে আপনার পেমেন্টের প্রমাণসহ (ট্রানজেকশন আইডি) ভূমি মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ১৬১২২-এ যোগাযোগ করুন অথবা পোর্টালে দেওয়া অভিযোগ দাখিলের অপশন ব্যবহার করুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *