নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার পদ্ধতি

জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নগুলোর মদ্ধে একটি হলো – কোনো নির্দিষ্ট জমির আসল মালিক কে? বিশেষ করে যখন আপনি জমির খতিয়ান নম্বর এবং দাগ নং জানেন না, শুধু মাত্র জমির মালিকের নাম জানেন, তখন শুধু মাত্র নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা কঠিন হয়ে যায়। আর তাই অনেকেই জানতে চান, শুধুমাত্র নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই কিভাবে করব এবং এর সঠিক পদ্ধতি কী? বর্তমানে অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাইয়ের সুযোগ থাকলেও, নাম দিয়ে মালিকানা যাচাই করা কিছুটা কঠিন। এই আর্টিকেলে আমরা জানব কিভাবে শুধুমাত্র নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা যায়, চলোন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

কেন জমির মালিকানা যাচাই করা প্রয়োজন?

যেকোন জমি ক্রয় বা বিক্রয় করার পূর্বে উক্ত জমির মালিকানা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন:

  • প্রতারণা এড়ানো: আপনি যদি একটি জমি ক্রয় করতে চান তাহলে ক্রয় করার পূর্বে জমির সঠিক মালিকানা যাচাই করে নিন, কারণ যেকেউ ভুয়া মালিক সেজে আপনার কাছে জমি বিক্রি করতে পারে, তাই জমির ক্রয় করার আগে অবশ্যই মালিকানা যাচাই করুন এবং প্রতারণা থেকে বেছে থাকুন
  • পরিকল্পনা:জমি ক্রয় করার পর বাড়ি নির্মাণ বা অন্য কোন পরিকল্পনা করার আগে আবারও নিশ্চিত হয়ে নিন যে জমির মালিকানা সঠিক ব্যাক্তির কাছে রয়েছে বা আপনিও জমির বৈধ মালিক হয়েছেন কিনা।
  • লেনদেন: ব্যাংক বা কোন এনজিও থেকে জমির বিপরিতে লোন নিতে হলে অবশ্যই জমির সঠিক মালিকানা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে
  • উত্তরাধিকারী: ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমি আপনার মালিকানায় আসতে হলে পূর্বের মালিকানা যাচাই করা প্রয়োজন

নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার সীমাবদ্ধতা

শুধুমাত্র নাম ব্যবহার করে জমির মালিকানা যাচাই করা সম্ভব হলেও, এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বা সহজ পদ্ধতি নয়। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে:

  • একাধিক ব্যক্তি: বাংলাদেশে একই নামে অনেক মানুষ রয়েছে এবং এটাই স্বাভাবিক। তাই নির্দিষ্ট কোনো মৌজায় একই নামে একাধিক জমির মালিক থাকতে পারেন, আর এটা নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করতে সমস্যা করতে পারে।
  • নামের বানান: সরকারি রেকর্ডে নামের বানান ভুল থাকতে পারে কিংবা একি নাম ভিন্ন বানানে থাকতে পারে। যেমন, কারো নাম ‘আব্দুর রহিম’ রেকর্ডে ‘মোঃ আব্দুল রহিম’ বা শুধু ‘রহিম’ থাকতে পারে। আর এই বানানের কারণে নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা ব্যর্থ হতে পারে।
  • রেকর্ড: সকল জমির রেকর্ড এখনও সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল হয়নি বা অনলাইন করা হয়নি। অনেক মৌজার জমির তথ্য গুলো এখণো ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়না।
  • বাপ-দাদার নামে রেকর্ড: অনেক সময় জমি বাবা কিংবা দাদার নামে রেকর্ডভুক্ত থাকে, যা বর্তমান মালিকের নামে নামজারি করা হয়নি। সেক্ষেত্রে বর্তমান মালিকের নাম দিয়ে মালিকানা যাচাই করতে চাইলে কোনো তথ্য পাওয়া যাবে না।
  • ভুল তথ্য: পুরনো রেকর্ড গুলোতে হাতের লেখা থাকে এবং অনেক সময় এগুলো হয় অস্পষ্ট এবং বানান ভুলের কারণেও নামভিত্তিক অনুসন্ধান জটিল হতে পারে।

এই কারণ গুলোর জন্য, শুধুমাত্র নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা সম্ভভ নাও হতে পারে।

অনলাইনে নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই পদ্ধতি

শুধুমাত্র নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই বা অনুসন্ধান করতে পারেন। অনলাইন এবং অফলাইন দুই ভাবেই নাম দিয়ে মালিকানা অনুসন্ধান করা যেতে পারে, এখানে আমারা শুধু জানব কিভাবে অনলাইনে নাম দিয়ে মালিকানা যাচাই করতে হয়:

বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি সেবা পোর্টাল (land.gov.bd)-এ গিয়ে নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার সুজোগ রয়েছে তবে খতিয়ান নং এবং দাগ নং দিয়ে আরও সহজে মালিকানা যাচাই করা যায়।

  1. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: dlrms.land.gov.bd -তে গিয়ে প্রথমে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী মেনু নির্বাচন করুন, সার্ভে খতিয়ান কিংবা নামজারি খতিয়ান
  2. খতিয়ানের ধরন ও ঠিকানা নির্বাচন: ‘সার্ভে খতিয়ান’ বা ‘নামজারি খতিয়ান’ নির্বাচন করার পর জমির বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং নির্দিষ্ট মৌজা নির্বাচন করুন।
  3. ‘মালিকের নাম’ অপশন নির্বাচন: অনুসন্ধান তালিকাতে গেলে দেখা যাবে প্রাথমিক ভাবে খতিয়ান নং দিয়ে অনুসন্ধান করার অপশন রয়েছে, তবে নিছে দেখতে পাবেন অধিকতর অনুসন্ধান নামে একটি বাঁটন রয়েছে সেখাতে ক্লিক করলে আরও দুটি অপশন আসবে সেগুলো হলো দাগ নং এবং মালিকানা নাম।
  4. নাম দিয়ে অনুসন্ধান: এবার আপনি যেই নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করতে চান সেটা মালিকানা নাম অপশনে লিখুন তারপর অনুসন্ধান বাঁটনে ছ্যাপ দিয়ে রেকর্ড খুজুন
  5. ফলাফল: যদি ঐ নামে ঐ মৌজায় কোনো রেকর্ড থাকে, তাহলে খতিয়ানের একটি তালিকা প্রদর্শিত হবে। প্রতিটি খতিয়ানের ‘বিস্তারিত’ অংশে ক্লিক করে মালিকের পিতার নাম, ঠিকানা এবং জমির বিবরণ (দাগ নম্বর, পরিমাণ) দেখে আপনার জমির মালিকানা সম্পর্কে জানতে পারেন

সফলভাবে মালিকানা যাচাইয়ের জন্য কিছু টিপস

  • যত বেশি তথ্য তত ভালো: শুধুমাত্র নামের উপর নির্ভর না করে, মালিকের পিতার নাম, ঠিকানা, জমির আনুমানিক অবস্থান, দাগ নম্বর (যদি সম্ভব হয়) ইত্যাদি যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন, যাচাই প্রক্রিয়া তত সহজ হবে।
  • বানানের বিভিন্নতা: অনুসন্ধান করার সময় নামের সম্ভাব্য বিভিন্ন বানান (যেমন: মোঃ, মোহাম্মদ, শুধু নাম) ব্যবহার করে দেখুন।
  • একাধিক উৎস যাচাই: অনলাইন পোর্টাল, ভূমি অফিস এবং স্থানীয় অনুসন্ধান – সম্ভব হলে একাধিক উৎস থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখুন।
  • নামজারি: মনে রাখবেন, সর্বশেষ মালিকানার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় হালনাগাদ নামজারি খতিয়ানে। তাই বিক্রেতার নামে নামজারি করা আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
  • সহায়তা: যদি প্রক্রিয়াটি জটিল মনে হয় বা আপনি কোনো সমস্যা খুঁজে পান, তবে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বা সার্ভেয়ারের পরামর্শ নিতে পারেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *